Thursday, 5 December 2013

কৃষকের বাজারঃ নিরাপদ কৃষিপণ্য ও কৃষকদের পুষ্টিচাহিদা নিবারণ

কৃষকের বাজারঃ নিরাপদ কৃষিপণ্য ও কৃষকদের পুষ্টিচাহিদা নিবারণ

 

 Ashik Sayem Chowdhury


কৃষকদের টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও নিরবচ্ছিন্নভাবে জীবনযাএারমান বৃদ্ধির পরিকল্পনা হিসেবে  এই সংগঠনের মুল উদ্দেশ্য হল কৃষকদের নিয়ে একটি যুগপাযুগী সামাজিক ব্যবসায় সংগঠনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দান করা। এই সংগঠন কৃষকদের শারীরিক পুষ্টি চাহিদা নিবারন ও সামাজিকভাবে ঐক্যবদ্ধ করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কৃষকদের পুষ্টি চাহিদা নিশ্চিত করার জন্য তাদেরকে স্বাস্থ্য সচেতন করে তোলা। বিভিন্ন নগরে ও শহরাঞ্চলে “মিনা বাজার”,“ এগোরা র মত সুপারশপ আছে বিত্তবান্ ও মধ্যবিওদের সাস্থ্যসম্মত ও ন্যয্যমূল্যের নিরাপদ কৃষিপণ্যের বাজার সুবিধা প্রদান করার জন্য। কিন্তু যারা নিন্মআয়ের মানুষ বিষেশত কৃষি কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য গ্রামে তাদের জন্য কোন বিকল্প বাজার ব্যবস্থা নেই যেখানে কৃষকদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই স্বাস্হ্যসম্মত কৃষিপণ্য ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যের বাজার করা যায়। আমরা কৃষকদের জন্য গ্রামকেন্দ্রিক একটি  বিকল্প বাজার ব্যবস্থা তৈরির উদ্যোগ নেবার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
যেখানে সামগ্রিক (হিলষ্টিক) বাজার ব্যবস্থার বিজনেস-টু-বিজনেস মার্কেটিং কাজে লাগিয়ে কম দামে পুষ্টি চাহিদা দেওয়া যাবে। যুগপৎভাবে “ভোক্তা সমবায় সমিতি” ও উৎপাদক সমবায় সমিতিকে কাজে লাগিয়ে কৃষকদের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে একতাবদ্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে।ক্ষুদ্র উপাদনকারিদের অদক্ষ ব্যবস্থাপনা ও মুলধনের অভাব সঙ্ক্রান্ত প্রতিবন্ধকতা দূর করে আমরা তাদেরকে একটি নতুন সামগ্রিক (হিলষ্টিক)  বাজারব্যবস্থা তৈরি করে দেবার প্রচেস্টা চালিয়ে যাচ্ছি যা কিনা তাদের উপার্জনক্ষমতা দিয়ে তাদের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করার প্রয়াস চালিয়ে যাবে। “খাদ্য ঋন পলিসি” হল এমন একটি সম্ভাবনাময় প্রকল্প যার বাস্তবায়নের মাধ্যমে কৃষকদেরকে মুদ্রাস্ফীতির নেতিবাচক প্রভাবের হাত থেকে রক্ষা করে বিকল্প সামগ্রিক (হিলষ্টিক)  বাজারব্যবস্থা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া গেলে, খাদ্য ও কৃষিপণ্যের চাহিদা ও যোগানের সামজ্ঞস্য রেখে উচ্চমূল্যের বিপরীতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা তৈরি হবে ।অর্থনৈতিক কৃষিপণ্যের উৎপাদনে উচ্চ সুদভিওিক ঋনের বিপরীতে মুনাফাভিওিক মুলধন বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা হবে। শুধুমাত্র কৃষকদের পুষ্টিচাহিদা নিবারণ ও জীবনযাএার মানোন্নয়নে   কার্যক্রম চলছেকৃষকদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা, ক্রয়ক্ষমতা,স্বাস্হ্যসচেতনতার দিকসমূহ, বাৎসরিক আয়-ব্যয়ের সামজ্ঞস্যতা, নিরাপদ খাদ্য ও কৃষিপণ্য, উৎপাদনের সাথে সম্পৃক্ত  বীজ,সার ইত্যাদি সম্পর্কে সম্মক ধারণা, নির্দিষ্ট অঞ্চলের কৃষি বিভাগের অবকাঠামোগত ও প্রযুক্তিগত অবস্তা প্রভৃতি বিষয়ের উপর জরিপ থেকে প্রাপ্ত তথ্যসমূহের ভিওিতে পরিকলপনা তৈরি হয়।  একটি বৈজ্ঞানিক পুষ্টিচাহিদা পদ্ধতি দিয়ে বের করে সেই অনুযায়ী ক্রয়ক্ষমতার পরিধিকে মানদন্ড রেখে সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্যতালিকা মেনে বাজারব্যবস্থা তৈরির প্রচেষ্টা চলছে।সুতরাং তাদের সঠিক    পুষ্টিচাহিদার দিক নির্দেশনা দেওয়া যাবে।নিয়মিত কার্যক্রমের একটি হল  প্রতি মাসে কৃষকদেরকে নিয়ে পুষ্টি চাহিদা বিষয়ক সেমিনার এর আয়োজন। এতে তাদেরকে বিভিন্ন কৃষিক্ষেএে উন্নত দেশের কৃষকদের বর্তমান অবস্থা নিয়ে জানানো হবেফলে তারা নিজেদের তুলনামূলক অবস্থান সম্পর্কে ধারণা পেতে পারে সরাসরি  ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। রাসায়নিক সার মুক্ত শাকসবজি উৎপাদনের গুরত্ব তুলে ধরে এর বৈজ্ঞানিক উৎপাদন প্রক্রিয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে বিনিয়োগকারী-কৃষকদের সমন্বিত প্রয়াসে সাহিত করা হবে।প্রাকৃতিক সার দিয়ে উৎপাদিত শাকসবজি নিয়ে গবেষণা করা, বাজারজাত করা ও গণসচেতনতা তৈরি করার বেপারে প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা নিতে সক্ষম। এক্ষেত্রে সামাজিক ব্যবসায়ের সাতটি মৌলিক নীতি কে আদর্শ হিসেবে মেনে চলা হবে।সামাজিক ব্যবসা অন্য আর দশটি ব্যবসার মতোই হবে, তবে পার্থ্ক্য হলো

এই ব্যবসার উদ্দেশ্য হবে দারিদ্র বিমোচন। বিশেষত যেগুলো ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে ঝুঁকি তৈরী করে। যেমন- স্বাস্থ্য, শিক্ষা। কিন্তু সবচেয়ে বেশি মুনাফা  করা যাবে না।
২। প্রকল্প অর্থনৈতিকভাবে টেকসই হতে হবে।
৩। বিনিয়োগকারীরা তাদের মূলধন ফেরত নেবেন। কোন লাভ্যাংশ পাবেন না।
৪। লভ্যাংশ প্রতিষ্ঠানের উন্নতি ও সম্প্রসারণে ব্যবহার হবে।
৫। প্রকল্পগুলো হবে পরিবেশ বান্ধব।
৬। কর্মরত শ্রমিকরা প্রচলিত বাজার অনুযায়ী পারিশ্রমিক পাবেন। কর্মস্থল হবে উন্নত।
৭। কর্মীরা হাসিমুখে কাজ করবে।
 এভাবে কৃষকরা দারিদ্রতা বিমোচনের পাশাপাশি অর্থনৈতিক দুরবস্থার হাত থেকে মুক্তি পেয়ে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারবে বলে “কৃষকের বাজার” এর তরুন উদ্যোক্তারা কাজ করে যাচ্ছে।বি-টু-বি তাদেরকে একতাবদ্ধ হয়ে মধ্যস্থ ব্যবসায়িদের দৌরাত্ব থেকে রক্ষা করবে।
২০১০ সালের শেষের দিকের কথা। আমি তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপণনবিদ্যা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাএ।নিজস্ব বাগান থাকাতে কৃষিভিওিক বিপণনব্যবস্থায় আমার আগ্রহ ছিল। তখন আমি বাঁশখালী অঞ্চলের কিছু কৃষকের সাথে কৃষিবিপণন কে কাজে লাগানোর জন্য অর্থনৈতিক কৃষিপণ্য সম্পর্কে আলাপ করে তাদের অর্থনৈতিক দুরবস্থার কথা জানতে পেরেছিলাম। ক্ষুদ্র কৃষি ৎপাদনকারিদের ঘিরেই মধ্যস্থ ব্যবসায়িদের দৌরাত্ব বৃদ্ধি পায় এবং কৃষকরা ফসলের ন্যায্য মূল্য পায়না। নিরাপদ কৃষিপণ্য সম্পর্কে তারা সঠিকভাবে অবগত হয়না।প্রাচীনকালের প্রাকৃতিক উৎপাদনের  স্বাবলম্বী অবস্থা হারিয়ে এখন রাসায়নিক সারের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে খাদ্যব্যবস্থাপনায় বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে। তখন থেকেই কৃষকদেরকে পুষ্টিচাহিদা নিয়ে উজ্জীবিত করার জন্য কিছু একটা করতে মন চাইছিল। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে সাউথ এসিয়ান ইয়ুথ সোসাইটির উদ্যোগে “সামাজিক ব্যবসা” শীর্ষক তিন দিনের একটি আন্তর্জাতিক সেমিনার অংশগ্রহন করলাম। সেই সেমিনার থেকে বুঝতে পারলাম যে সামাজিক ব্যবসায় কৃষকদের সাধারন অর্থনৈতিক সমস্যার একটি ভাল সমাধান হতে পারে।এটি একটি নতুন প্রজন্মের অর্থনৈতিকভাবে টেকসই ব্যবসায় ধারনা। ২০১২ সালের ২৯ শে জুন রাজধানী ঢাকার নর্থসাউথ ইউনিভা্র্সিটিতে অনুষ্ঠিত সামাজিক ব্যবসার উপর একটি সামিট হয়। সেখানে “নতুন সামাজিক ব্যবসায়” ধারনার প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। উক্ত প্রতিযোগিতার মধ্যে আমাদের “কৃষকের বাজার” নামক সামাজিক ব্যবসায়ের আইডিয়াটি অন্যতম আইডিয়া হিসেবে স্বীকৃতি পায় ও অভিনন্দিত হয়। নোবেল বিজয়ী ইকনোমিষ্ট ড. মুহাম্মদ ইউনুস আমাদের গ্রুপকে নতুন সামাজিক ব্যবসায়ের আইডিয়ার স্বীকৃতিস্বরূপ পুরষ্কারটি তুলে দেন। এর পর ২০১২  থেকেই আমি আশিক সায়েম উদ্যোক্তা ও সভাপতি হিসেবে, আব্দুল ফারুক সাধারন সম্পাদক হয়ে, উন্নয়ন সংগঠক নোমান উল্লাহ বাহার, আজহারউদ্দিন, আহমেদ রায়হান আল নাহিয়ান, আব্দুর রহিম, ইয়াসির সামিত সহ কিছু তরুন উদ্যোক্তা মিলে “কৃষকের বাজার” নামের সামাজিক সংগঠন গডে তুলি। এই সংগঠনের কার্যক্রম চলছে বাশঁখালীর ইলশা ইউনিয়ন অঞ্চলের কৃষকদের নিয়ে। অস্থায়ী অফিস হচ্ছে বাঁশখালীর ইলশা প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং এখানে সামাজিক ব্যবসায় শীরষক সেমিনার এর আয়োজন করা হয়।